সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্য

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা - ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র | | NCTB BOOK
2

সমবায় একটি আইন সৃষ্ট, অনন্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ব্যবসায় সংগঠন। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট পেশাজীবীরা উদ্দেশ্য অর্জনে উৎসাহ বা শক্তি পায়। এটি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি সংগঠন। বাংলাদেশে সমবায় আইন-২০০১ অনুসারে সমবায় সংগঠন গঠিত ও পরিচালিত হয়। নিম্নে সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো—

  • দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির কতিপয় লোক স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এরূপ সংগঠন গঠন করতে পারে। সমবায় আইন অনুসারে নিবন্ধকের নিকট এ ধরনের সমবায় প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করতে হয়।
  • শুধুমাত্র স্বেচ্ছাকৃতভাবে কতিপয় ব্যক্তি সমবায়ের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এধরনের প্রতিষ্ঠান গঠন করে, কোনো রকম বাধ্যবাধকতার স্থান এখানে নেই ।
  • ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ধনীদের দ্বারা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিক নিষ্পেষণের শিকার হয়। সমবায় শোষক শ্রেণির হাত থেকে শোষিতদের আত্মরক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে ।
  • সমবায় সমিতির প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ১০ টাকা বা তদুর্ধ মূল্যের হতে পারে।
  • ব্যবসায়ের কোনো বিশেষ অংশে অর্থাৎ উৎপাদন, বণ্টন ইত্যাদিতে জড়িত হয়ে সম্মিলিতভাবে কার্য পরিচালনার মাধ্যমে সদস্যদের আর্থিক কল্যাণ সাধনই এরূপ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য । মুনাফা অর্জন এর মূল উদ্দেশ্য নয় । 
  • সমবায় আইনানুসারে সমবায় সমিতি অবশ্যই নিবন্ধিত হতে হয়।
  • সমবায়ের অর্জিত মুনাফার সবটুকু সদস্যদের মধ্যে বণ্টন হয় না। বাধ্যতামূলকভাবে এর ন্যূনতম ১৫% সংরক্ষিত তহবিলে এবং ৫% সমবায় উন্নয়ন তহবিলে চাঁদা হিসেবে সংরক্ষণ করে বাকি অংশ সাধারণ সভার সিদ্ধান্তক্রমে শেয়ার গ্রহীতাদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। [৩৪ (১) ধারা]
  • বাংলাদেশে প্রচলিত ২০০১ সালের সমবায় সমিতি আইনের ৮(১ক) ধারা মোতাবেক প্রাথমিক সমবায় সমিতি গঠনের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২০ জন ব্যক্তি সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ও জাতীয় সমিতির ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ টি সমবায় সমিতি সদস্য থাকতে হয় । সদস্য সংখ্যার সর্বোচ্চ সীমা আইনে বলা হয়নি । 
  • সমবায় সমিতি আইন-সৃষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান। এর পৃথক আইনগত সত্তা ও পরিচিতি আছে। এটি নিজ নামে পরিচালিত । 
  • সমবায় সমিতির সদস্যদের নিকট থেকে মাসিক সঞ্চয়ের মাধ্যমে অথবা সদস্যদের মধ্যে শেয়ার বিক্রয় করে সমবায়ের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করা হয় ।
  • সমবায় সমিতিতে প্রত্যেক সদস্যদের দায় তার ক্রয়কৃত শেয়ার মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকে । 
  • ২০০১ সনের সমবায় আইনের ১৫(২ক) ধারা অনুযায়ী একজন সদস্য সমিতির মোট মূলধনের এক-পঞ্চমাংশের (১/৫) বেশি শেয়ার ক্রয় করতে পারে না। কেননা বেশি শেয়ার ক্রয় করলে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, সমবায় সমিতি আইনের অধীন গঠিত, পরিচালিত, পৃথক সত্তা ও সীমিত দায় বিশিষ্ট একটি স্বেচ্ছা প্রণোদিত ব্যবসায় সংগঠন। এর সদস্যরা গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি অনুসরণে পরিচালিত হয় যার মূল লক্ষ্য হলো এর সদস্যদের আর্থিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।

Content added By
Promotion